#Me_Too হার্ভি ওয়েস্টাইন
বিনোদন
জগত বিশেষ করে হলিউডের অলিগলির যারা খবর রাখেন তাদের কাছে বেশ পরিচিত এক
নাম। ভদ্রলোক পেশায় চিত্র প্রযোজক। অনেক নামকরা ছবি বানিয়েছেন নিজের
প্রযোজনা
প্রতিষ্ঠান থেকে। জিতে নিয়েছেন অস্কার সহ অনেক আরাধ্য পুরুষ্কার। কিন্তু
সাম্প্রতিক সময়ে ভদ্রলোক আলোচনায় এসেছেন সম্পুর্ন ভিন্ন কারনে।
প্রায় ৫০ এরও অধিক নারী তার বিরুদ্ধে যৌন নীপিড়ন, শ্লীলতাহানী ও ধর্ষনের
অভিযোগ এনেছেন। আক্রান্ত নারীদের অভিযোগ, বিগত কয়েক দশক ধরেই
হার্ভি এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন। সিনেমাতে কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে বিভিন্ন
সময়ে তিনি নারীদের সাথে অশোভন আচরন করেছেন। নারীদেরকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন।
বাধ্য করেছেন, তার কথামত চলতে। ক্যারিয়ারের স্বার্থে এতদিন সবাই চুপ ছিলেন।
তাছাড়া হার্ভির মত প্রভাবশালী লোকের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে অনেকেই সাহস পান
নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই স্বীকারোক্তির ঘটনা বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করে।
অনেক নামকরা সেলিব্রেটি তার এইসব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।
গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টইমস সহ বিশ্বের প্রভাবশালী দৈনিকগুলোতে এ নিয়ে
ধারাবাহিক রিপোর্ট ছাপা হয়। আক্রান্ত নারীরা ফেসবুক, টুইটারে
#Me_Too হ্যাশট্যাগ দেয়া শুরু করেন।
নিরবতা ভেংগে বলা শুরু করেন, “আমিও এই
নীপিড়নের শিকার। এবং সে কথা সবাইকে জানাতে আজ আর আমার কোন দ্বিধা নেই।“
অনেকে সেই সব দিনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেংগে পড়েন। হার্ভি তার
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে বরখাস্ত হন। অস্কারের অফিশিয়াল ক্লাব থেকে কাটা
পড়ে তার নাম । তার স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যান। এক সময় হার্ভিকে পুলিশ
গ্রেফতার করে। বর্তমানে প্রায় ১০ লক্ষ ডলারের বিনিময়ে তিনি জামিনে আছেন।
তার বিরুদ্ধে নিউইয়র্ক পুলিশের জোর তদন্ত চলছে।
বিনোদন দুনিয়ার
হার্ভির ঘটনা, নতুন কিছু নয়। কাজ পাইয়ে দিতে কিংবা সিনেমায় সুযোগ করে দেয়ার
বিনিময়ে এমন নীপিড়নের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। বলিউডেও অনেক নামকরা অভিনেতা,
প্রযোজকের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ উঠেছিল। কিছুদিন আগে এই
বাংলাদেশেও একজন পরিচিত মডেল ও নবীন অভিনেত্রী একই অভিযোগ তুলেছিলেন।
বলেছিলেন, অনেক পরিচালক, প্রযোজক কাজের বাইরে তার সাথে সময় কাটাতে চান,
তাকে বিদেশ ভ্রমনের অফার দেন। তিনি এতে সম্মত হন নি। তাই তার কাজের সুযোগও
অনেক কমে গিয়েছে। সব নায়িকাই হয়তো একইরকম পরিস্থিতির শিকার হন না।
কিন্তু অনেক উঠতি মডেল, অনেক নবীন নায়িকাকেই যে নিরবে এমন অনেক
‘স্যাক্রিফাইস’ করতে হয়, এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। ফিরে যাই হলিউডের
কথায়। সে সমাজে দুজন নারী পুরুষ সম্মতির ভিত্তিতে যে কোন কিছুই করতে পারে।
একসাথে রাত কাটাতে পারে, ইচ্ছেমত ঘুরতে যেতে পারে। পারে স্রেফ বন্ধু হয়ে
এক ছাদের নিচে দিনের পর দিন বসবাস করতে। ‘চরিত্রের প্রয়োজনে’
ক্যামেরার সামনে যে কোন দৃশ্যেই তারা অভিনয় করতে পারে। নিতান্তই অচেনা একজন
নারী কিংবা পুরুষের সাথে একান্ত অন্তরঙ্গ দৃশ্যেও তাদের কোন দ্বিধা নেই।
‘পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে যেহেতু যে কোন কিছুই বৈধ’, তাই পরিচালক,
প্রযোজকেরাও তার সুযোগ নেয়। কখনও কখনও কাজ পাওয়ার জন্য অনেক উঠতি মডেল ও
অভিনেত্রীরাও স্বেচ্ছায় ধরা দেয় পরিচালক, প্রযোজকদের বাহুডোরে। এই যখন
পরিবেশ, তখন কোনটা নীপিড়ন আর কোনটা সমর্পন তা নির্ধারন করার উপায় কি?
হার্ভির হয়তো দৃষ্টামুলক শাস্তি হবে। জীবনের শেষ কয়েকটা দিন তাকে হয়তো
বন্দী জীবন কাটাতে হবে। কিন্তু এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি কি বন্ধ হবে? নারীদের
জীবন কি আগের চাইতে স্বস্তির হবে?
বিনোদন দুনিয়ার রংগিন স্বপ্ন
যাদের চোখেমুখে, সেই সব নবীন মডেল কিংবা উঠতি নায়িকারা কি নিজেদেরকে আগের
চাইতে নিরাপদ বোধ করবে? এই সমস্যার সমাধানই বা কি?
চলুন যাই, ভিন্ন এক
সমাজে। এ সমাজে মানুষেরা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করে। বিশ্বাস করে এ জীবনই শেষ
নয়।
মৃত্যুর পরে আরও এক জীবন আছে। সে জীবনে আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহী করতে হবে। এ
জীবনের সকল অন্যায়, অপরাধের দায় মাথায় নিয়ে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। এ
সমাজের মানুষেরা প্রতিদিন পাঁচবার আল্লাহ্র সামনে মাথা নত করে। প্রতিদিন
পাঁচবার মৃত্যু পরবর্তী জীবনের কথা স্মরন করে।
এখানে নারীরা
আপাদমস্তক পর্দায় নিজেদের ঢেকে রাখে। নিজের বাবা চাচা ভাই স্বামী কিংবা
নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সাথে নিরিবিলিতে সময় কাটায় না। পর
পুরুষের সামনে নাচে না, গায় না। নিজেকে উম্মুক্ত করে না। মিষ্টি ভাষায়,
চোখের ইশারায় অন্য পুরুষের দিকে ধায় না। পুরুষেরা মাটিতে চোখ
নামিয়ে চলে। নিকটাত্মীয় ছাড়া অন্য কোন নারীর দিকে চোখ তুলে তাকায় না।
প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোন নারীর সাথে একান্ত আলাপের সাহস করে না। এই
সমাজে বিয়ে ছাড়া নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার কোন সুযোগ নেই।
সমাজ এমন যে
কোন সম্পর্ককে অত্যন্ত খারাপ চোখে দেখে। সমাজের এই বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে
কেউ অনৈতিক সম্পর্কে জড়ালে তার জন্য আছে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। একবার
ভাবুন তো, এমন কোন সমাজে কি হার্ভি ওয়েস্টাইনের মত কেউ কি জন্ম নিতে
পারে? কেউ কি পারে হার্ভির মত দিনের পর দিন নারীদের এভাবে হেনস্তা করতে,
নীপিড়ন করতে? করাতো দূরে থাক, কোন পুরুষ এমন কোন প্রস্তাব দেয়ার আগে কি
দশবার ভাববে না? সমাজ সংসারের কথা ভেবে তার কি বুক কাঁপবে না? কোন
সমাজে নারী বেশি নিরাপদ বোধ করবে? এই সমাজে নাকি সেই সমাজে?
এই সমাজে
যেখানে পুরুষ নারীর দিকে চোখ তুলে চাইতেও হাজারবার ভাবে? নাকি সেই সমাজে,
যেখানে নারী মাত্রই পুরুষের চোখে সহজলভ্য ‘ভোগ্য’ বস্তু? একজন
হার্ভির হয়তো শাস্তি হবে। কিন্তু সমাজ ব্যবস্থার বদল না হলে, মন মানসিকতার
পরিবর্তন না এলে, লাখো হার্ভি তখনও পর্দার আড়ালে কলকাঠি নাড়বে। হাজারও নারী
“রঙ্গিন স্বপ্নের” মায়াজলে নিজের ইজ্জতের আত্মাহুতি দিবে। স্বপ্নভংগের
বেদনায় ধিকি ধিকি আগুনে নিরালায় দগ্ধ হবে। এটাই নারীর নিয়তি, অবশ্যম্ভাবী পরিনতি। এ থেকে যে তার মুক্তি নেই...
No comments